OrdinaryITPostAd

সন্তান লেখাপড়ায় অমনোযোগী হলে বাবা মায়ের করণীয়

 পৃথিবীতে সব বাবা মা-ই চায় তাদের সন্তান সুশিক্ষিত, আদর্শ ও নৈতিক চরিত্রের অধিকারী হতে। ভালভাবে লেখাপড়া করে , পড়াশুনায় মনোযোগী হয়, তার জন্য আপ্রান চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তুু কালের পরিবর্তনের সাথে সাথে পাঠ্যবইয়ের প্রতি মনোযোগ না দিয়ে বাচ্চারা মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ বা ডেস্কটপেে ইনডোর গেমসে বেশি আগ্রহী বা আসক্ত হয়ে উঠছে।

মা বাবা তাদের সন্তানদের নিয়ে চিন্তার কোন শেষ থাকেনা। বেশিরভাগে শিশুদের ঘন্টার পর ঘন্টা একটানা পড়তে চায়না। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে,শিশুদের বয়স কত তার উপর নির্ভর করে তার মনোযোগ। ৪/৫ বছরের শিশু এবং ৯/১০ বছরের শিশুর মনমানসিকতা এক হবেনা। শিশুদের অভ্যাসের মাধ্যমে মনোযোগ বাড়াতে হবে। একেবারে ছোট থেকে শিশুদের অভ্যাস করে দিলে অমনোযোগিী মনোভাব থেকে অনেকটাই কমানো যাবে। 

 শিশুকে পড়ালেখায় মনোযোগী করে তুলতে রুটিন মাফিক পড়াবেন

শিশুকে পড়াশোনায় মনোযোগী করে তুলার জন্য একটা নির্ধারিত রুটিন তৈরি করে  দিন। রুটিন মাফিক পড়াশুনা করলে করলে অতিরিক্ত সময় ধরে লেখাপড়া করার চিন্তা থাকেনা। দীর্ঘ সময় ধরে পড়াশুনা না করে মাঝে মাঝে যদি কিছুক্ষণ ব্রেক নেওয়া যায় তাহলে একঘেয়েমী মানসিকতা থাকবেনা। 

নিরিবিলি বা শান্ত ভাবে পড়াশুনা করার জন্য একটি আরামদায়ক জায়গার ব্যভস্থা করে দিন। পড়ার ঘরে এমন একটি পরিবেশ করে দিন যেন যে কেউ ঐ ঘরে যে কোন সময় যাওয়া আসা না করে। বাইরের বা অন্য কেউ ঘরে প্রবেশ বা প্রস্থান করলে শিশুর পড়াশুনায় বিঘ্ন হতে পারে । শিশুর হাতে কোন মোবাইল বা ডিভাইস দেয়া যাবেনা। পড়ায় বিরক্তি বোধ করলে হাতের কাছে পেন্সিল, রাবার, স্কেল, রংপেন্সিল, কলম ইত্যাদি উপকরন সাথে দিবেন।

 আপনার শিশুকে খেলাধুলা করার সুযোগ দিবেন

এই উপকরনগুলো দিলে শিশু বিভিন্ন ধরনের ছবি বা চিত্র আঁকবে। যদি পড়ার টেবিলে বেশিক্ষন পড়াশুনা করে ক্ষিধে পায় তাহলে তার টেবিলে কিছু শুকনো খাবার দিবেন।  এতে করে সে পড়াশুনায় মনোযোগী হবে। ক্লাশের বা প্রাইভেটের পড়া সময়মতো প্রস্তুুত করে নিবে। এই ভাবে রুটিন মাফিক পড়াশুনা করলে শিশুর পড়ার প্রতি তার দায়িত্ব আসবে। 


 

এছাড়া প্রতিদিন নিয়মিত খেলাধুলা করার  জন্য অন্তত এক বা দুই ঘন্টা শিশুকে সুযোগ দিবেন। খেলাধুলা করলে শরীরের ঘাম ঝরবে। ফলে শরীরের এনডরফিন বেশি পরিমানে নি:সৃত হবে।  বাইরে থেকে বাড়িতে বা বাসায় আসার কিছুক্ষন পর পড়তে বসলে পড়ার প্রতি সে মনোযোগী হবে। 

আপনার শিশু কি চায় তা বুঝার চেষ্টা করবেন

আপনি  আপনার শিশুর মনের অবস্থা বুঝতে চেষ্টা করবেন। সে কি চাই । যেসব ক্রিয়েটিভ বিষয় তার আগ্রহ বেশি সেই বিষয়টিতে তাকে সুযোগ দিবেন। এতে করে তার মানসিক অবস্থা ফ্রেশ থাকবে। আপনি যদি তাকে এসব বিষয়ে সুযোগ না দেন তাহলে তার মনের বিরুদ্ধে যাবে। 

রাতে ঘুমানোর আগে বিভিন্ন গল্প শোনাবেন

শিশুরা বিভিন্ন ধরনের গল্প শুনতে খুব ভালবাসে। রাতে ঘুমানোর আগে আপনার শিশুকে বিভিন্ন ধরনের গল্প শোনাবেন। সন্তানের পাশে শুয়ে নাটক বা অভিনয় করে গল্প বললে শিশুরা খুব মজা পায়। এর ফাঁকে ফাঁকে পাঠ্য বইয়ের প্রস্তুুতকৃত পড়া গুলো থেকে প্রশ্ন করলে সে উত্তর দিতে তেমন বিরক্তি বোধ করবেনা। তবে আপনাকে বুঝতে হবে যে, আপনার শিশুটি গল্প শুনতে মনোযোগী কিনা? 

পড়ার টেবিলে হাতের লেখা সুন্দর ও ছবি  আঁকতে সহযোগীতা করুন

লেখার সময় শিশুকে উৎসাহ দিন , সুন্দর করে লিখলে তোমার স্যার তোমাকে খুব ভালবাসবে। আবার ছবি আঁকার সময় বিভিন্ন ধরনের ছবিতে কোথায় কি ধরনের রং দিতে হবে তা তাকে বুঝিয়ে দিন। তাহলে সে যে কোন ছবি অংকন করতে আগ্রহী হবে এবং দেখতেও সুন্দর লাগবে। কয়েকটি ছবি তাকে আঁকতে দিন । কিছুক্ষন পর  ছবিগুলো ঠিকমতো আঁকা হয়েছে কিনা তা দেখুন। ছবিগুলো কিছু ভাল না হলেও তাকে উৎসাহ দিন। এতে করে আপনার শিশু খুব খুশি হবে। 


 

পড়াশুনার ক্ষেত্রে আপনার শিশুর জন্য কিছু কৌশল অবলম্বন করুন

পড়াশুনা করার সময় আপনার সন্তানকে এমন কিছু কৌশল দেখিয়ে দিন যাতে করে শিশুটি খুব সহজে তার পড়াগুলো মুখস্থ করতে পারে। ছোট বাচ্চা হলে পড়ার মাঝে বিভিন্ন ধরনের ছবি এঁকে দেখাবেন। এতে তারা পড়ায় আকৃষ্ট হবে। আর যদি আপনার সন্তান বড় হয় তাহলে তাকে সহজভাবে পয়েন্ট আকারে সাজিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবেন। এতে আপনার সন্তান খুব সহজে পড়া মুখস্থ করতে পারবে। 

পড়ায় আকৃষ্ট করার জন্য আপনার সন্তানকে প্রশংসা করুন

যে কোন সময় পড়ায়  আগ্রহী করতে সন্তানকে প্রশংসা করুন। পরীক্ষার সময় পড়ার উপর চাপ বেশি আসে। এতে সন্তানের উপর চাপ পড়ে। সন্তানকে চাপমুক্ত রাখার জন্য এমনকিছু উপদেশ দিবেন যাতে সে তার পড়াকে চাপ মনে না করে। যেমন: যদি তুমি পরীক্ষায় ভাল কর তাহলে তোমাকে পুরস্কার দিব বা কোন জিনিস তোমাকে কিনে দিব, তোমাকে নতুন সাইকেল কিনে দিব ইত্যাদি। এত সন্তানের পড়ার প্রতি আগ্রহ আরও বৃদ্ধি পাবে। 

একঘেয়েমি পড়া না করে ভিন্নতা আনার চেষ্টা করুন

পড়ার সময় একই ধরনের পড়া বার বার পড়লে আপনার সন্তান বিরক্ত হয়ে  পড়বে। পড়ায় মনোনিবেশ করবেনা। এজন্য আপনার উচিত বারবার একই পড়া না পড়িয়ে কিছু কিছু করে পড়াকে ভাগ করে দিলে চাপ কম হবে। এতে আপনার শিশুর পড়াশুনার প্রতি আত্মবিশ্বাস বাড়বে এবং পড়তে আগ্রহী হবে। আপনার শিশুর উপর এক ঘেয়েমি পড়া না করে ভিন্নতা আসবে। 

শিশুদের লেখাপড়ায় মনোযোগী করতে বকাঝকা করবেননা

বেশির ভাগ শিশুরা চঞ্চল ও পড়ার প্রতি অমনোযোগী হয়। এজন্য তাদের উপর কড়া শাসন করা যাবেনা। বেশি শাসন করলে শিশুর জন্য নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাদের কোন কিছু ভুল করলে বা ক্ষতি করলে শিশুদের আঘাত কিংবা বকাঝকা করবেন না। মনে রাখবেন, স্নেহ , মায়ামমতা, ভালোবাসা দিয়ে সবকিছু জয় করা যায়। 

আপনার সন্তানকে তার বয়স অনুযায়ী বুঝিয়ে, তার সাথে বেশির ভাগ সময় দিয়ে তার ব্যক্তিত্বের নেতিবাচক প্রভাব দুর করার চেষ্টা করবেন। যেগুলো শিশুর পছন্দ নয়, তার জন্য তাকে দায়ী করবেন না। পরিবারেরর মা বাবার আচার-আচরণ, ব্যবহার, সন্তানের সাথে বেশিক্ষন সময় এগুলোর উপর আপনার শিশুর ভবিষ্যৎ গড়ে উঠবে। কাজেই শিশুর মেধা বিকাশে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়া হলে শিশুরা নিয়মমতো পড়াশুনায় মনোযোগী হবে। 

আপনার শিশু  কি খাবার পছন্দ করে তা বুঝার চেষ্টা করবেন

শিশুরা অনেক সময় সব খাবার খেতে চায়না। এজন্য আপনাকে ঠিক করতে হবে কোন খাবার আপনার সন্তান পছন্দ করে। যেটা তার পছন্দ তাকে সেই খাবার খেতে দিবেন। তবে যে খাবার শরীরে ক্ষতি করবে সেটা খাওয়াবেন না। খাবার ঠিকমতো না খেলে মনোযোগের অভাব দেখা দিতে পারে। তাছাড়া আপনার সন্তান ঠিকমতো রাতে ঘুমায় কিনা সেদিকে নজর দিবেন। উপযুক্ত ঘুম না হলে কোন কাজই তার কাছে ভাল লাগবেনা। 


 

সন্তানের জন্য বাবা মায়ের দায়িত্ব পালন 

বাবা মায়ের উচিত হবে তার সন্তানের সাথে বেশি বেশি করে কথা বলা। শিশুরা কি বলতে চায় তা গুরুত্বসহকারে শুনুন এবং বুঝার চেষ্টা করুন । এতে করে আপনার সন্তানের চঞ্চলা ভাব কমে যাবে। সন্তানের সাথে বন্ধু সুলভ আচরণ করুন। এতে শিশুরা আপনার কথা শুনবে। তার মন ভাল থাকবে, কাজের প্রতি , লেখাপড়ার প্রতি তার মনোযোগ থাকবে। 

স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব সন্তানের উপর নেতিবাচক প্রভাব

প্রায় প্রতিটি পরিবারে স্বামী স্ত্রীর দ্বন্দ্ব বা সহিংসতা শিশুর উপর প্রভাব পড়ে। তারা যদি একে অপরের সাথে কথা না বলে, একজন আরেকজনকে অবহেলা বা উপেক্ষা করতে দ্বিধাবোধ করেনা। এসময় শিশুদের উপর বড় ধরনের প্রভাব পড়ে। শিশুর মানষিক, আবেগ, অনুভুতি, আচরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রেও প্রভাব পড়ে। 

সন্তানরা বাবা মায়ের এই দ্বন্দ্ব খুব সহজে বুঝতে পারে। বাবা মায়ের এই নেতিবাচক প্রভাব পড়ার কারনে সন্তানের অভাব বা ব্যাঘাত ঘটে। ব্রেনের উপর চাপ পড়ে, উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা তৈরি হয়। স্কুলে পড়াশুনায় তার মন বসেনা, বিসন্নতায় ভুগে। এই সমস্ত সমস্যার মধ্য দিয়ে যে সন্তান বড় হয় তার আচার আচর ভাল হয় না, মাদকাসক্ত, বাবা মায়ের অবাধ্যতা, মারামারি করার প্রবনতা বেশি দেখা যায়। অপরদিকে কন্যা সন্তান হলে তারা অনেক দু:খ কষ্ট মনের ভিতর চেপে রেখে দেয়, অস্থিরতা বোধ করে। 


 

এঅবস্থায় সন্তানদের মধ্যে মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। কাজেই সন্তানদের ভবিষ্যতে সুখ, শান্তি, স্বাভাবিক জীবন, সৎচরিত্র, আদর্শবান, শিক্ষিত জ্ঞানী হিসেবে গড়ে তুলতে হলে বাবা মায়ের দাম্পত্য জীবনকে সুখী ও সুন্দর করে তুলতে হবে। এতে করে সন্তানরা উচ্চশিক্ষিত হয়ে উঠবে। একটি কথা মনে রাখবেন পারিবারিক কলহকে কেন্দ্র করে সন্তানদেরকে কখনই যেকোনো একজনের পক্ষ নিতে বাধ্য করবেননা বা একজন আরেকজনের খারাপ বা নেতিবাচক দিক তুলে ধরবেন না। স্বামী স্ত্রীর কলহ যদি দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী হয় তাহলে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিবেন। 

আপনার সন্তানকে যখন তখন মোবাইল তুলে দেবেননা

অনেক বাবা আছে তার সন্তানকে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে সময় অসময়ে মোবাইল হাতে তুলে দেয়। এতে তারা বিভিন্ন ধরনের কার্টুন, গেম, বিভিন্ন ধরনের ছবি দেখে অভ্যাসে পরিনত হয়। দেখা যায় মোবাইল হাতে না নিলে খেতে চায় না। ক্ষুধা লাগলেও সেদিকে লক্ষ্য রাখেনা। শুধু মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করে। পড়াশুনার দিকে মন দেয়না। বাবামায়ের উচিত হবে সন্তানদের মোবাইল হাতে দেয়ার অভ্যাস ত্যাগ করা। এতে করে মোবাইলের প্রতি সন্তানদের কোন আগ্রহ থাকবেনা। 

উপসংহার:  প্রত্যেক বাবা মাই তার সন্তানকে সুশিক্ষিত, করে গড়ে তুলতে চায়। কিন্তু পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যার কারনে সন্তানেরা উল্টো পথে চলে। তাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আপনারা ভাল থাকুন , আপনার সন্তানদের ভাল থাকতে দিন। তাহলে আপনার সন্তান সঠিকভাবে লেখাপড়া করে উচ্চশিক্ষিত হয়ে আপনাদের মুখ উজ্জ্বল করবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪