কালাইয়ের রুটি খেলে আমাদের শরীরের জন্য যে উপকার হয়
কালাইয়ের রুটি হলো চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বিখ্যাত ও রুচিশীল খাবার। এই রুটি তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিমান কালাইয়ে এবং চাউলের আটা একসঙ্গে মিশিয়ে কিছু পরিমান পানি দিয়ে রুটি বানানো হয়। আবার উক্ত আটার সঙ্গে গমের আটা মিশিয়েও বানানো যায়। এই জেলায় কালাইয়ের রুটি বহুল প্রচলিত একটি খাবার। এছাড়া কিছু কিছু শহরে বিশেষ করে রাজশাহীর কিছু কিছু জায়গায় সরকারী হাসপাতালের সামনে কালাইয়ের রুটি বানিয়ে বিক্রি করা হয়।
পেজ সুচিপত্র:
- যে সব জায়গাতে কালাইয়ের উৎপাদন হয়
- যেভাবে কালাইয়ের রুটি বানানো হয়
- যেভাবে রুটি খেলে বেশ স্বাদ লাগে
- রুটি খেলে যে উপকার হয়
- সকালে রুটি খেলে যে উপকার হয়
- নিয়মিত রুটি খেলে ত্বক ভাল রাখে এবং মুখের দাগ থাকেনা
- উপস্থাপন
এই রুটি প্রায় সকলের নিকট পছন্দনীয়। নিয়মিত রুটি খেলে শরীর স্বাস্থ্য ভাল থাকে এবং শরীরের ফিটনেস তৈরিতে সাহায্য করে। রুটিতে রয়েছে প্রোটিন, কার্বহাইড্রেট, মিনারেল এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী এবং যে কোন খাবার হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। চলুন কালাইয়ের রুটি খাওয়ার উপকারীতা জেনেনি।
যে সব জায়গাতে কালাইয়ের উৎপাদন হয়
কালাই উৎপাদনের আদি স্থান হলো চাঁপাই নবাবগঞ্জের চরাঞ্চল এলাকায় যার পরিচিত নাম হলো দিয়াড় এলাকা। এই এলাকায় প্রচুর মাশকালাইয়ের উৎপাদন হয়। এই খাবার ছিল নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্ত মানুষের খাবার। সকালের এই নাস্তাকে আঞ্চলিক ভাষায় লাহারি (নাস্তা) হিসেবে খাওয়া হয়। কৃষকরা খুব সকাল বেলায় মাঠে লাঙল বলদ নিয়ে জমি চাষাবাদ করতে যায়।
এরপর তার বাড়ির কাউকে দিয়ে কৃষকদের নাস্তা খাওয়ার জন্য পাঠানো হয়। এই রুটি খেলে অনেকক্ষন ধরে পেটে কোন ক্ষুধা লাগেনা। চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন কালাইয়ের রুটি খায় বলে শহরে অনেকে এই এলাকার মানুষকে কালাই বলে সম্বোধন করে বা খুটা দেয়। কিন্তুু কালাইয়ের রুটি খাওয়ার যে কি মজা তারা বুঝেনা। চাঁপাই নবাবগঞ্জ ছাড়া নওগাঁ, রাজশাহীসহ ঢাকার কিছু কিছু জায়গায় কালাইয়ের রুটি বানিয়ে বিক্রি করে নিম্নবিত্ত শ্রেণির ব্যক্তিরা আয় করে তাদের সংসার চালায়।
যেভাবে কালাইয়ের রুটি বানানো হয়
কালাইয়ের রুটি বানাতে হলে প্রথমে একটি মাটির খোলা মাটির চুলোতে বা গ্যাসের চুলোতে দিয়ে সামান্য কিছু তাপ দিয়ে খোলাকে গরম করতে হবে। এরপর মাটির বা ষ্টিলের পাত্রে কালাই বা চালের আটা একসঙ্গে মিশিয়ে সেই আটাগুলো হাত দিয়ে আটায় পরিমানমত পানি দিয়ে আটাকে মসৃন করার জন্য কিছুক্ষন মুথে নিতে হবে।
এবার কিছু পরিমান আটা দুই হাতের তালু দিয়ে হালকা চাপ দিয়ে যে পরিমান পাতলা গোল করা দরকার ঠিক সেই পরিমান রুটি বানিয়ে খোলাতে দিয়ে প্রথমে হালকা গরম করে তাকে উল্টিয়ে আবার বেশি গরম করে চুড়ান্তভাবে রুটি হয়ে যাবে। এর পর খোলা থেকে রুটি উঠিয়ে নিতে হবে যা খাওয়া উপযোগী হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
যেভাবে রুটি খেলে বেশ স্বাদ লাগে
আপনি হয়তো জানেনা যে কালাইয়ের রুটি কি দিয়ে খেলে বেশ মজা ও স্বাদ লাগে। তাহলে জেনে নিন রুটির সাথে কি কি উপাদান লাগে। আপনি যদি রুটি খেতে চান তাহলে রুটির সাথে বেগুনের ভর্তা অথবা ধনিয়া পাতার চাটনি খেতে পারেন। এতে খেতে বেশ স্বাদ লাগে। তাছাড়া আরও বেশি স্বাদ লাগবে যদি আপনি রুটির সাথে একটা পিয়াজ কুচি কুচি করে কেটে তাতে কিছু পরিমান লবন এবং কিছু পরিমান শুকনো মরিচ
একসাথে পাটা দিয়ে বেঁটে গুঁড়ো করে সেই লবন গুলো একটি বাটি অথবা থালাতে নিয়ে কিছু পরিমান খাঁটি সরিষার তেল দিয়ে খেলে বেশ মজাদার লাগে। আপনি যদি না খেয়ে থাকেন তাহলে একবার খেয়ে দেখেন কেমন স্বাদ ও রুচিশীল মনে হবে। মন জুড়িয়ে যাবে এই খাবার খেলে। এই রুটির সাথে হাঁসের মাংস বা গরুর মাংস দিয়ে খেলে আরও বেশি মজা পাবেন। রুটির সাথে বড় মাছ রান্না করে খেলে বেশ স্বাদ লাগে।
রুটি খেলে যে উপকার হয়
ক) কালাইলের রুটি কম দামে পাওয়া যায়: কালাইয়ের রুটি দাম সাধারনত প্রতি পিস ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকায় পাওয়া যায়। তবে কিছু উন্নত মানের এই রুটি প্রতি পিস ৫০ টাকা দিয়ে ক্রয় করে খেতে হয়।
খ) কালাইয়ের রুটি পুষ্টি গুনে ভরপুর: কালাইয়ে থাকে প্রোটির, মিনারেল এবং চালে থাকে সামান্য প্রোটিন ও ফ্যাট। চাল এবং কালাইয়ের আটা দিয়ে তৈরি হয় রুটি। এই রুটিতে যে মিনারেল থাখে তা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। কালাইয়ে প্রোটিনের পরিমান বেশি থাকায় শরীরের গঠন মজবুত করে এবং ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভাত না খেয়ে রুটি খাওয়া বেশি ভালো।
গ) সমাজের প্রায় সকল ব্যক্তির নিকট প্রিয় খাবার:
সমাজের প্রায় সকল শ্রেণির লোক এই রুটি পছন্দ করে। এই রুটি তৈরিতে সমাজের দরিদ্র শ্রেণির ছেলেমেয়েদের ভুমিকা বেশি। শহরে বিভিন্ন জায়গায় সাধারন ব্যক্তিরা রুটি বানিয়ে সেগুলো বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। অধিকাংশ রুটি তৈরি করা হয় রাস্তার উপর বিভিন্ন জায়গায় যা পরিবেশ সম্মত হয়না। তবে সাময়িককালে বিভিন্ন অভিজাত রেস্তোরাগুলোতে কালাইয়ের রুটি বানিয়ে বিক্রি করে আয় করে থাকে।
ঘ) ওজন কমাতে সহায়তা করে: অনেক ব্যক্তি আছেন যারা ওজন নিয়ে চিন্তিত থাকেন। ওজন কমানোর জন্য রাতে ভাত না খেয়ে রুটি খেলে খুব তাড়াতাড়ি ওজন কমে যাবে। তবে খুব বেশি করে খাবেননা। যে কোন খাবার অতিরিক্ত খেলে শরীরের জন্য ক্ষতি হতে পারে।
ঙ) রুটিতে রয়েছে ভিটামিন ও খনিজ লবন: আমাদের দেহকে সুস্থ্য ভাবে চলাচলের জন্য ভিটামিন ও খনিজ প্রয়োজন। শরীরে ভিটামিন ও খনিজ চাহিদা পুরনে প্রতিদিন সকালে ও রাতে রুটি খাওয়া উত্তম। এতে করে শরীর হালকা থাকবে এবং শরীরের দৈহিক গঠন ঠিক থাকবে।
চ) রুটি গ্যাস ও বুক জ্বালাপোড়া নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে:
কালাইয়ের রুটিতে রয়েছে থাক্স ফাইবার যেজন্য গ্যাস , বুকের জ্বালাপোড়াসহ বদ হজমে বেশ উপকার করে। নিয়মিত খাদ্যের সাথে রুটি খেলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন ও স্ট্রোকের মত মারাত্বক রোগ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া অনেকটাই সম্ভব হবে।
ছ) কালাইয়ের ডাল খেলে যে সব উপকার হয়: পুুষ্টি বিজ্ঞানিদের মতে কালাইয়ের ডালের অনেক পুষ্টি গুন রয়েছে। কোষ্ঠ কাঠিন্য দুর করতে সাহায্য করে। কোলষ্টেরল নিয়ন্ত্রন করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে বেশ ভুমিকা রাখে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ত্বকের যত্নে দারুনভাবে কাজ করে। কাজেই ভাতের সাথে নিয়মিত ডাল খেলে বিভিন্ন ধরনের উপাকার পাওয়া যায়। দিন দিন কালাইয়ের চাহিদা বাড়ার দরুন এর দামও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডালের চাহিদা বৃদ্ধির দরুন অনেক অসাধু ব্যবসায়ী ডালের মধ্যে ভেজাল ডাল । এর মধ্যে দেয়া হচ্ছে অন্যান্য ডাল যেমন: মুগডাল, খেসারি ডাল ইত্যাদি । আপনি ডাল কিনতে গেলে বাজারে যাচাই করে ভেজালমুক্ত কালাইয়ের ডাল ক্রয় করবেন। এতে ঠকবেননা।
সকালে রুটি খেলে যে উপকার হয়
বেশির ভাগ পরিবার সকালে রুটি খেতে পছন্দ করে। ঘুম থেকে উঠেই নাস্তার চেয়ারে বসে রুটি খাওয়ার জন্য। তবে জানা দরকার রুটি টাটকা নাকি বাসি খাওয়া বেশি উপকারী। বিশেষজ্ঞদের মতে একদিন আগের রুটি পরের দিন খেলে পুষ্টি গুন বেশি হয়। তবে খাওয়ার নিয়ম হলো রাতে রুটি বানিয়ে রেখে সকালে নাস্তা খাওয়ার সময় বাসি রুটি খেলে শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
নিয়মিত রুটি খেলে ত্বক ভাল রাখে এবং মুখের দাগ থাকেনা
আপনি জানেন কি কালাইয়ের ডাল ভাতের সাথে খেতে কতই না স্বাদ লাগে। এর পুষ্টি গুনও আছে। এতে রয়েছে শতকরা ২০ থেকে ২৫ ভাগ আমিষ। পুরুষদের শুক্রানু বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এই ডাল চুলে মাখলে চুলের খুশকি দুর হয় এবং চুলকে নরম রাখে। কালাইয়ের ডাল স্বাদ ও গন্ধে অনন্য। ভাতের সাথে ডাল , আমের আচার বা কাঁচা আমের টক একসঙ্গে খেলে কিনা স্বাদ লাগে। খেলেই বুঝতে পারবেন। শরীরকে স্মাট ও ফিটনেশ তৈরি করতে রুটি বেশি বেশি করে খাবেন।
কালাইয়ের রুটি নিয়মিত খেলে বিশেষ ক্ষেত্রে শরীরের ক্ষতি হতে পারে
কালাইয়ের রুটি খেলে যেমন শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে উপকার হয় তেমনি কিছু ক্ষতিও হতে পারে। জেনে নিন কি কি ক্ষতি হতে পারে। মনে রাখবেন অতিরিক্ত কোন খাবারই দেহের জন্য ক্ষতিকর। যেমন বেশি করে রুটি খেলে কোলেস্টরেল এর মাত্রা বেড়ে যেতে পারে, ত্বকের স্কিন ঢিলা হতে পারে, চুল পড়া জনীত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
হরমোন জনীত সমস্যা আসতে পারে, উচ্চ রক্তচাপের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে, বদ হজম হতে পারে ইত্যাদি। কাজেই পরিমিত পরিমান রুটি খেলে শরীর সুস্থ্য থাকবে । মানসিকভাবে নিজকে খুব স্মাট মনে হবে। সুস্থ্য জীবন গড়ে তুলতে শুধু রুটি নয় সব খাবারই পরিমিত পরিমানে খাবেন। তাহলে আপনি ভাল থাকবেন। আসুন আমরা পরিমিত খাবার খাই এবং সুস্থ্য জীবন গড়ি।
উপস্থাপন: প্রিয় পাঠকবৃন্দ আপনি হয়তো জেনে গেছেন কালাইয়ের রুটি খাওয়ার উপকারীতা কতটুকু। শরীরকে ভাল রাখতে , শরীর স্মাট তৈরিতে, নিজকে ফিটনেস করার ক্ষেত্রে নিয়মিত পরিমিত পরিমান কালাইয়ের রুটি খাবেন। এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে। আসুন আমরা কালাইয়ের রুটি খাওয়ার অভ্যাস করি।
এই পোষ্টটি যদি আপনাদের ভাল লাগে তাহলে কমেন্ট করে জানাবেন। আর যদি কোন বিষয়ে জানার প্রয়োজন মনে করেন অবশ্যই কমেন্ট বক্সে মন্তব্য করবেন। এই পোষ্টটি পড়ার ও জানার জন্য বিশেষভাবে আপনাদের অনুরো করা হলো। সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেষ করছি।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url