পাকা আম খাওয়ার পুষ্টিগুন, উপকারীতা ও অপকারীতা
পাকা আমে রয়েছে ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম ও খনিজ পদার্থ। তাছাড়া এই আমে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ক্যারোটিন যা চোখকে সুস্থ রাখে এবং ঠান্ডা, কাশিকে দুর করতে সহায়তা করে। পাকা আম খেয়ে প্রায় ২৫% ভিটামিনের চাহিদা দুর করে। চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে এবং রাতকানা রোগ থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে
প্রতি বছরের মে থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত পাকা দেখা যায়। তবে সব জাতের আম এক সঙ্গে পাকেনা। বিশেষ করে গুঠি, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, হিমসাগর ইত্যাদি আম প্রথকে পাকে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুস্বাদু আম হচ্ছে হিমসাগর (খিরসাপাত)। এই আম যেমন সুস্বাদু, তেমনি খেতে মিষ্টি।
সুচিপত্রঃ পাকা আম খাওয়ার পুষ্টিগুন, উপকারীতা ও অপকারীতা
পাকা আম খেয়ে যেসব উপকার হয়?
ক) পাকা আম পুষ্টিতে ভরপুর: বাংলাদেশসহ বেশি কিছু দেশে আম উৎপাদন হয়। কাজেই আম প্রায় দেশে অতি প্রিয় একটি ফল । সবাই পাকা আম খেতে পছন্দ করে। কাঁচা আম দেখতে অনেকটা সবুজ রং এবং পাকা আম হলদে রং এর হয়ে থাকে। এই উপমহাদেশের সবচাইতে সুস্বাদু ফল হলো আম।
খ) পাকা আমে ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘সি’ রয়েছে: পাকা আমে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ ও সি রয়েছে। যা দেহের বিভিন্ন ধরনের রোগ বা সমস্যা দুর করে থাকে। যেমন: চোখের বিভিন্ন প্রকার রোগ, মাথার চুল পড়া, খসখসে চামড়া নরম করা, হজমে সহায়তা করা ইত্যাদি। এছাড়া এই আমে প্রচুর প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি রয়েছে। যা কোলেস্টরের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। চেহারা সুন্দর রাখতে পাকা আম বিশেষ ভুমিকা রাখে।
গ) পাকা আম ত্বককে সুন্দর, উজ্জ্বল ও মসৃন রাখে: এই আমে আমাদের ত্বকের ভিতরে ও বাইরে থেকে সুন্দর রাখে, ত্বকের গোড়া পরিস্কার এবং ব্রণের সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে।
ঘ) আমে রয়েছে প্রচুর পরিমানে খনিজ লবণ: পাকা আমে প্রচুর পরিমানে খনিজ লবণ থাকায় দাঁত, নখ, চুলকে মজবুত করে। দাঁতের সমস্যা থাকলে তা দুর করতে সাহায্য করে।
ঙ) রক্ত স্বল্পতা দুর করে : পাকা আমের ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে এজন্য শরীরের স্বল্পতা দুর করতে বিশেষভাবে সহায়তা করে। শরীরের রক্ত ঘাটতি দেখা দিলে পাকা আম খাওয়া প্রয়োজন।
চ) হার্ট সুস্থ্য রাখতে সাহায্য করে: পাকা আম খাওয়ার ফলে মানুষের শরীরের যে হার্ট এর সমস্যা দেখা দেয় তা অনেকটা দুর করতে সহায়তা করে
ছ) হাড় মজবুত করে: পাকা আম খেলে হাড়কে মজবুত করতে বিশেষভাবে সহায়তা করে।
জ) ক্যানসার নিয়ন্ত্রনে সহায়তা করে: পাকা আমে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্টস উপাদান রয়েছে যা প্রস্টেট, লিউকেমিয়া ধরনের ক্যান্সার থেকে শরীরকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
ঝ) ওজন কমাতে সাহায্য করে: পাকা আমে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন থাকায় ভিটামিনের চাহিদা পুরনে যথেষ্ট ভুমিকা রাখে। যাদের ওজন বেশি হয়ে গেছে তাদের আমের মৌসুমে পাকা আম খেলে ওজন আসে আস্তে কমবে।
আরো পড়ুনঃ ১৫ দিনে ওজন কমানো উপায় জানুন
গর্ভাকালীন পাকা আম খাওয়ার উপকারীতা
ক)
অতিরিক্ত পাকা আম খাওয়া যাবেনা:গর্ভবতী
মেয়েদের জন্য কোন কিছুই অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক নয়। বেশি আম খেলে মাথা ঘুরে,
মাথা ব্যথা করে, স্বাভাবিক মেজাজ থাকেনা। তাই কতটুকু আম খাওয়া প্রয়োজন তা জানার
জন্য চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে যে পরিমান খেতে বলবে ঠিক সেই পরিমান আম খাওয়া যাবে।
খ) গর্ভবতী মেয়েদের বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে:গর্ভাবস্থায় মেয়েদের বেশিরভাগ সময় অসুস্থ থাকে। কাজেই অসুস্থতা রোধ করতে পাকা আম খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভুমিকা রাখে।
গ) গর্ভবতী মেয়েদের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি দেয়: গর্ভবতী মেয়েদের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির দরকার হয়ে থাকে। পুষ্টি পুরনের জন্য আমে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি ও ভিটামিন বি-৬ থাকায় মেয়েদের পুষ্টি পুরনে বিশেষ ভুমিকা রাখে।
পাকা আম খাওয়ার অপকারীতা
ক) ডায়াবেটিসসহ ওজন বেড়ে যায়: বিভিন্ন ফলের মধ্যে আম ফলের রাজা। সবাই আম খেতে পছন্দ করে। কিন্তুু অতিরিক্ত পাকা আম খেলে ডায়াবেটিসহ ওজন বেড়ে যায়, বদহজম হয়, পেট ব্যথা করে। আমে মিষ্টি বা চিনির মত খেতে স্বাদ থাকায় ডায়াবেটিস আক্রান্তদের জন্য ক্ষতি হতে পারে।
পাকা আমে মিষ্টি বেশি হওয়ায় অনেকে একাধিক আম খেয়ে থাকে। এজন্য আম বেশি খেলে ডায়রিয়ার উপক্রম হতে পারে। পাকা আমের মধ্যে ইউরিশিয়াল নামক এক পদার্থ থাকে যা এই পদার্থ দ্বারা শরীর চুলকায় । এর ফলে চর্মরোগ হয়। অনেক সময় ত্বক ফুলে যায় বা ফোস্কা পড়ে।
খ) পাকা আমে জ্বরের উপক্রম হতে পারে: পাকা আমে অনেক সময় ছত্রাক জাতীয় জীবানু থাকায় কারও শরীরে প্রবেশ করলে জ্বরের উপক্রম হতে পারে। ফলে ত্বকে অনেকসময় ফুসকুড়ি, চুলকানি বা লালচে ভাব দেখা দিতে পারে।
গ) শরীরে তাপ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে: গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত আম খেলে শরীরের তাপ বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই গরমের সময় অত্যধিক পাকা আম না খাওয়ায় ভালো। আমের সাথে দুধ মিশিয়ে খাওয়া উচিত নয়। এতে ডায়রিয়াসহ স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে । তাছাড়া যাদের বাথজনিত সমস্যা রয়েছে তাদের অতিরিক্ত পাকা আম না খাওয়া ভালো।
ঘ) ফরমালিন যুক্ত পাকা আম: অনেক অসাধু ব্যবসায়ী আমে ফরমালিন জাতিয় পদার্থ দিয়ে আমকে সতেজ, রং টকটকে এবং সহজে পাকেনা। এ ধরনের আম খেলে শরীরের জন্য ক্ষতি হবে। বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দিতে পারে। কাজেই ফরমালিন যুক্ত আম খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
উপসংহার: পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আম উৎপাদন
হয়। সকলের কাছে আম পছন্দনীয়। বেশির ভাগ মানুষ আম খায়। এই আম স্বাদে গন্ধে
অতুলনীয়। তবে বাংলাদেশে বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের আম উৎপাদন হয়। তবে চাঁপাই
নবাবগঞ্জের আম বেশি উৎপাদন হয় যা বিভিন্ন এলাকার চেয়ে এখানকার আম বেশি
মিষ্টি ও সুস্বাদু। তবে মিষ্টি থাকলেও অতিরিক্ত আম খাওয়া সঠিক নয়।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url