এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম সুস্বাদু আম বাজার কোথায় অবস্থিত -জেনে নিন
বাংলাদেশে যে কয়েকটি বিভাগ রয়েছে তার মধ্যে রাজশাহী একটি বিভাগ। এই বিভাগটি বরেন্দ্র অঞ্চল দ্বারা বেষ্টিত। তার মধ্যে এই বিভাগে চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার কানসাট আম বাজার বিখ্যাত। এই বাজারে বিভিন্ন জাতের সুস্বাদু আম বেচাকেনা হয়। শিবগঞ্জ উপজেলার অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালিত হয় উক্ত উপজেলার আম বাগানকে কেন্দ করে যা সারা বাংলাদেশে পরিচিতি লাভ করেছে।
এই উপজেলার কানসাট আম বাজারকে কেন্দ্র করে এই এলাকার স্থানীয় লোকদের উপার্জন বাড়ে যার জন্য তাদের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কানসাট আম বাজারে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে আগমন ঘটে। ফলে এই বাজারের জনপ্রিয়তা আরও বৃদ্ধি পায়।
যে সময় থেকে কানসাট বাজারে আমের সরবরাহ করা হয়
মুলত মে মাস হতে জুলাই/আগষ্ট মাসে পর্যন্ত কানসাট থেকে ৩ কিলোমিটার উত্তরে ধোবড়া বাজার পর্যন্ত আমের সারিবদ্ধ লাইন দেখা যায়। এমনকি কানসাট বাজার থেকে ৫ কিলোমিটার দক্ষিনে শিবগঞ্জের রাস্তা পর্যন্ত আম বিক্রি করতে দেয়া যায়। ঐ সময় যানবাহনের এত ভিড় যা কল্পনা করা যায় না। বহু দুর দুরান্ত থেকে আমের ব্যাপারী এসে এখানে আম ক্রয় করে এবং বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ দেয়া হয়।
কি পদ্ধতিতে আম বাজারে পৌঁছানো হয়
বিভিন্নভাবে বাগানে আম ভেঙ্গে বাজারে নিয়ে আসা হয়। বলতে গেলে একটি সাইকেলের দুই দিকে ডালি বোঝায় আম যার ওজন ৪ থেকে ৫ মন হেঁটে নিয়ে আসায়। এতে করে সাইকেল আরোহীদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আম নিয়ে আসে কানসাট আম বাজারে। দুরত্ব বিবেচনা করে প্রতি সাইকেলের ভাড়া ৫০০- ৮০০ টাকা। এই বাজারে বিভিন্ন জাতের আম বিক্রি হয়ে থাকে।
সাইকেল ছাড়াও বাগান ভ্যাগ গাড়ি দিয়েও আম বাজারে নিয়ে আসা হয়। এই ভ্যান গাড়িতে প্রায় ৮-৯ মন আম বোঝায় করা হয়। অবাক হবেন যে, এই বাজারে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ কোটি টাকার আম বেচা কেনা হয়। এই সময় কানসাটের মেইন রাস্তার দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে অনেকগুলো আড়ৎ ঘর বসানো হয়।
এই বাজারে বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্নভাবে আম নিয়ে আসে। কেউ নিজ বাগান থেকে আম ভেঙ্গে নিয়ে আসে আবার কেউ অন্যের বাগান কয়েক বছরের জন্য লিজ নিয়ে বাগান পরিচর্যা করে আম তৈরি করে থাকে। এই বাজারে কয়েক মাসের জন্য আমের আড়ৎ তৈরি করা হয়। আড়ৎদাররা বাজার থেকে আম কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে দেন।
আমের বাজার বৃহত থাকায় এই স্থানে বেশি কিছু হোটেল , রেস্তোরা, বিভিন্ন প্রকার খাবারের দোকান গড়ে উঠে। তাদেরও বিক্রি বেশ ভালো হয় এবং এই মৌসুমে অনেক টাকা উপার্জন করতে সক্ষম হয়। এই বাজারে বেচাকেনা বেশি থাকায় প্রচুর লোকের সমাগম ঘটে।
এই বাজারে কত রকমের আম বেচাকেনা হয়?
এই এলাকায় কয়েকশ জাতের আম উৎপাদন করা হয়। তার মধ্যে প্রধান যে আমগুলো বেশি উৎপাদন হয় সেগুলো হলো- গুটি, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, হিমসাগর( খিরসাপাত) লক্ষনভোগ, ফজলি, আশ্বিনা ইত্যাদি। বর্তমানে বিভিন্ন পদ্ধতি আসার ফলে গাছে টেপ করে বিভিন্ন জাতের আম তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। এতে করে কৃষকরা বেশ লাভবান হচ্ছে। তাছাড়া আরও কিছু আম উৎপাদন হচ্ছে যেমন: আম্রপালি, বারি-৪ , কাটিমন, হাড়িভাঙ্গা, ব্যানানা ইত্যাদি জাতের আম উৎপাদন করা হচ্ছে। এই আম গুলোর দাম বেশি হওয়ায় কৃষক বা ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছে।
কানসাটের আম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সক্ষম
কানসাটের শুধু দেশের অভ্যন্তরে নয়, দেশের বাইরেও রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সক্ষম হচ্ছে। বিশেষ করে হিমসাগর আমকে জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃত দেয়ায় এই আম বিদেশে রপ্তানি করা হয়। এই আমের স্বাদ অত্যন্ত মিষ্টি। আঁশ নেই, আটি ছোট। বিশ্বজুড়ে এই আমের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে।আমের আকার ও আকৃতি বেশ সুন্দর। হলদে রংএর দেখতে। সাইজ ভাল হওয়ায় এই আম দেশে বেশি দামে বিক্রি হয়।
যে সময় পাকা আম খাওয়ার উপযুক্ত
চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন প্রকার আম উৎপাদন হয়ে থাকে। তবে সবগুলো একসঙ্গে পাকেনা। প্রথমত গোপালভোগ, গুঠি এবং গুঠি জাতিয় আম পাকে। এরপর হিমসাগর, ল্যাংড়া, লক্ষনভোগ, ফজলী, আম্রপালি, বারি-৪, হাড়িভাঙ্গা ইত্যাদি আম ধারাবাহিকভাবে পাকা শুরু হয়। মে, জুন মাসে সর্বপ্রথম আম পাকা শুরু হয়। এই সময় মুলত গোপালভোগ, খিরসাপাত, ল্যাংড়া আম খাওয়া উপযুক্ত হয়। জুনের শেষ ভাগ থেকে জুলাই ও আগষ্টের প্রথম দিকে ফজলী, আম্রপালী, বারি-৪ ও আশ্বিনা পাকা আম খাওয়ার উপযোগী হয়।
যে সময়ে আমের প্যাকেট করা হয়
মে মাস থেকে মুলত আমের প্যাকেট করা হয়। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের আমের প্যাকেট করা হয়। বর্ষার সময় আমের বাগানে বিভিন্ন ধরনের পোকা লাগে। এর ফলে আমকে ফুঁড়ে দেয়। এমনকি মাছিকাটা এক প্রকার পোকা আমের গায়ে বসলে আমের উপর চিরচিরে দাগ পড়ে যায়। যে আমে এ ধরনের দাগ পড়ে সে আমটি পচে নষ্ট হয়ে যায়। আমাকে নষ্ট হওয়া থেকে দুর করার জন্য আমের প্যাকেট করা হয়।
কানসাট আম বাজার জমে উঠলেও নায্য দাম পাচ্ছেননা আম চাষী ব্যবসায়ীরা
বিগত কয়েক বছর থেকে কানসাটের আম ব্যবসায়ীরা আমের নায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আম ধরা থেকে শুরু করে বাজারজাতকরন পর্যন্ত সময়মত বিষ দেয়া, খরার মৌসুমে মাঝে মাছে পানি দেয়া, আম পাড়া খরচ, বাজারে নিয়ে আসা ভাড়া সবকিছু মিলিয়ে আমে ব্যাপক খরচ হয়। কৃষকরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আম চাষ করলেও বাজারে নায্য দাম পাচ্ছেনা। ফলে তারা প্রচুর অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে।
উপসংহার: চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটের আম বাজার দেশের বৃহত্তম এবং এশিয়ার মহাদেশে দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে। এখানকার সব ধরনের আম যেমন সুস্বাদু , তেমনি এই আমের ব্যপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। আম বেচাকেনার সময় কানসাটের এই বাজার ভরপুর থাকে। চলাচল করা কঠিন হয়ে যায়। দৃশ্য দেখলে মনে হবে যেন আম আর আম।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url