শিশুরা মোবাইল বা ল্যাপটপে আসক্ত হওয়ার কুফল ও প্রতিকার জেনে নিন
আজকাল সবচেয়ে দুশ্চিন্তার কারন হলো বেশিরভাগে শিশুদের টাচ ফোনের প্রতি আসক্তি। সময়ের সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রযুক্তির ব্যবহার ও মোবাইল আসক্তি। ছোট বড় আজকাল সবাই মোবাইল ফোন ব্যবহার করে বেশিরভাগ সময় কাটাচ্ছে। বিশেষ করে শিশুদের মোবাইল ফোনের প্রতি আসক্তি চরমে। মোবাইল ফোনের প্রতি বাচ্চাদের আগ্রহ কমাতে শিশুদের বকাঝকা বা মেরে নিয়ন্ত্রন করা যাবেনা।
শিশুদের কাছ থেকে মোবাইল কেড়ে নিলে হিতে বিপরীত হতে পারে। শিশুর হাতে যে মোবাইলটি দিবেন সেই ফোনে কঠিন পাশওয়াড দিলে তারা সহজে খুলতে পারবেনা। শিশুর মানষিক বিকাশের জন্য বাসা বা বাড়িতে ওয়াইফাই বা ইন্টারনেট সংযোগ না রাখাই ভালো। ঘরের মধ্যে খেলাধুলার ব্যবস্থা করুন। তাছাড়া মোবাইলে কয়েকটি অডিও রেকড করে রাখলে তারা শুনবে এবং সেথেকে সময় কাটার সুবিধা হবে।
শিশুদের মোবাইলে আসক্তির জন্য দৃষ্টিশক্তি কমে যাবে
শিশুরা মোবাইল দেখার ফলে তাদের চোখের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেকক্ষন মোবাইল দেখতে দেখতে দেখা যাবে মাথা ব্যাথা, ঘাড়ে ব্যাথা, শরীরে ব্যাথা কিংবা হাতে ব্যাথাও হতে পারে। বাচ্চার মায়েরা বলে যে তার সন্তান সবসময় মোবাইল দেখছেনা কেবলমাত্র তিন বেলা বা চার বেলা খাবারের সময় মোবাইল দেখে দেখে খায়।
এর ফলে দেখা যায় বাচ্চারা খাওয়ার সময় মোবাইল নিয়ে মনযোগী থাকে তার সাথে সাথে বাচ্চার মা স্বাচ্ছন্দে বাচ্চাদের খাওয়াতে থাকে। কোন ক্ষোত্রে বিরক্ত হয়না। কিন্তু তারা সেই খাবারের প্রতি কোন আগ্রহ বোধ করেনা। আগ্রহ না থাকায় কোন খাবার সে মনদিয়ে খায়না বা সেই খাবারে কোন রুচি থাকেনা।
শিশুদের মোবাইল বা ল্যাপটপে আসক্ত হওয়ার কুফলগুলো জেনে নিন
ক) অতিরিক্ত মোবাইল দেখা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর: অধিক মাত্রায় মোবাইলে আসক্ত হওয়ার ফলে শিশুরা বেশির ভাগে ঘরে শুয়ে সময় কাটিয়ে দেয়। এতে করে শিশুদের পড়াশুনার প্রতি মনোযোগী কম হয়। বাইরে তেমন সময় কাটায় না । ফলে শিশুদের স্বাস্থ্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
খ) পারিবারিক দুরত্ব বা বিচ্ছিন্নতা দেখা দেয়: শিশুরা মোবাইলে আসক্ত হওয়ার ফলে মা বাবার সাথে সময় দেয়না। যার জন্য পরিবারের সাথে শিশুদের আগ্রহ কমে যায়।
গ) মোবাইল দেখার ফলে শিশুদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে: মোবাইলের স্কিনে যত বেশি দেখবে তত শিশুদের চোখের উপর চাপ পড়বে। দেখা শিশুরা মোবাইল দেখতে পেলেই রাতে ঘুমানোর আগে বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফোন দেখে। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে দেখলে অনিদ্রাসহ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা হতে পারে।
ঘ) শিশুরা বেশিরভাগ অনুকরনপ্রিয়: বড়দের হাতে বড় ফোন দেখলে সে ফোন নিতে আগ্রহী হয়। যেমন: শিশুদের সামনে ফোনে চ্যাট করা, গান শোনা , গেম খেলা , ইউটিউবে ভিডিও দেখা , কাউকে ফোন করা ইত্যাদি । অনেকসময় বাবা মা শিশুদের হাতে মোবাইল তুলে দেন।
এতে শিশুরা আসক্ত হয়ে পড়ে। তারা বাইরে খেলতে না গিয়ে ফোন দেখে। প্রত্যেক খাবার সময় মোবাইল ফোন চাই। এভাবে যদি নিয়মিত দেখে তাহলে তাদের শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি হবে এবং মোবাইলের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়বে।
শিশুদের মোবাইল আসক্তি দুর করতে যা যা করবেন
ক) শিশুরা বাবা মাকে বেশি অনুকরন করে: বেশিরভাগে বাবা মা অনেকসময় মোবাইলের স্কিনে তাকিয়ে থাকতে দেখলে স্বাভাবিকভাবে তাদেরকে অনুকরন করে। এজন্য বাচ্চাদের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে মোবাইল দেখা বন্দ করুন। শিশুদের বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করুন।
খ) শিশুদের ঘরে রেখে বাইরে বেড়াতে নিয়ে যান: অনেক বাবা আছেন যারা শিশুদের বাসা বাড়িতে সবসময় রাখার চেষ্টা করেন। গন্ডির মধ্যে থেকে তারা অস্বস্তি বোধ করে। তারা মনে করেন বাইরে গেলে তাদের চলাফেরার গতিবিধি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এজন্য আপনার উচিত হবে তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে যে কোন জায়গায় বেড়াতে যাবেন, বিভিন্ন চিড়িয়াখানায় বা বিনোদমুলক এলাকায় নিয়ে যাবেন। এতে তাদের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হবে।
গ) শিশুদের মোবাইল ফোন দেখার নিয়ম তৈরি করুন: শিশুদের সব সময় হাতে ফোন না দিয়ে তাদের জন্য সময় নির্ধারন করুন। তদেরকে বলুন যে, কোন সময় থেকে কখন কোন সময় মোবাইল ফোন দেখবেন এবং তাদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করবেন। দেখবেন, মোবাইল দেখা অনেকটা কমে যাবে।
ঘ) শিশুদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করার অভ্যাস করুন: শিশুরা ভাল মন্দ বুঝার মত তাদের জ্ঞান হয় না। এজন্য আপনি তাদেরকে এড়িয়ে না গিয়ে তাদের সঙ্গে সময় দিন এবং ভাল ব্যবহার করুন। আপনি যদি ওদের উপর গুরুত্ব দেন তাহলে তারা সেটা শুনবে। অন্যভাবে তার সাথে কথা বলে তাকে আদর করে ডাকুন । তাদেরকে স্কুলের দেয়া পড়ার ব্যাপারে তাকে বলুন এবং বিভিন্ন গল্প শোনান তাহলে দেখবেন মোবাইল দেখা কমে যাবে।
ঙ) শিশুদের বিভিন্ন আকর্ষনমুলক বা খেলাধুলার কাজে ব্যস্ত রাখুন: শিশুদের খেলাধুলার জন্য বিভিন্ন ধরনের খেলনা, ছবি, লুডু ছক্কা ইত্যাদি বাজার থেকে কিনে এনে তার হাতে দিয়ে খেলতে উৎসাহিত করুন। এগুলো পেলে সে এসব কাজ বা খেলার প্রতি তার আগ্রহ বাড়বে এবং মোবাইল দেখা কমে যাবে।
চ) শিশুদের হাতে যখন তখন মোবাইল না দেয়ার চেষ্টা করুন: বাসাবাড়িতে মোবাইল থাকলে তারা মোবাইল দেখবে এটাই স্বাভাবিক। কাজেই চোখের সামনে মোবাইল না রাখার চেষ্টা করবেন। তাকে কৌশলে অন্যভাবে বোঝানোর বুঝাবেন। দেখবেন আস্তে আস্তে মোবাইল দেখার অভ্যাস কমে যাবে।
ছ) শিশুরা কি চায় তা বুঝার চেষ্টা করুন: মোবাইল ছাড়া আপনার শিশু আর কি পছন্দ করে তা খুজে বের করার চেষ্টা করুন। তাদেরকে বাধ্য করে নয় , স্বাধীনতা দিবেন। তাদের পছন্দ মত অন্য কিছু চাইলে তাকে দেয়ার চেষ্টা করবেন। এতে করে আপনার শিশু অত্যন্ত খুশি হবে।
উপসংহার: আপনার সন্তানকে সুস্থ্য রাখতে, ভবিষ্যৎ জীবনকে সুষ্ঠুভাবে গড়ে তুলতে মোবাইলে আসক্ত করবেন না। শিশুকে নিয়ে প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া যেমন: চিড়িখানা, খেলাধুলা, এমনকি তাদের সাথে বিভিন্ন ধরনের গল্প গুজব করা, তাদের সাথে বেশি সময় দেয়া, তাদের প্রকৃত ইচ্ছা বুঝার চেষ্টা করা, ইত্যাদি। শিশুদের ঘরে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত রাখতে পারেন।
বিশেষ করে মায়েদের এ কাজটি করা বেশি জরুরী। আপনার সন্তানকে যে কোন ছোট কাজে সহযোগীতা করবেন। এতে আপনার সন্তানের ঘরের কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়বে এবং মোবাইলে আসক্ত থেকে অনেকটা সরে আসবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url