আমের মুকুল ও ফল টিকিয়ে রাখার উপায় জেনে নিন
বাংলাদেশের অনেক জেলাতে আমের উৎপাদন হয়ে থাকে। তার মধ্যে চাঁপাই নবাবগঞ্জের আম বিখ্যাত। আম হচ্ছে বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফল। এজন্য আমকে ফলের রাজা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে আমের মুকুল আসা ও প্রাথমিক ফল ধরার এই সময়টা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কেননা এ সময় প্রতিকুল আবহাওয়া ও বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় যাকে বলা হয় মহা লাগা । মুকুল ও গাছের পাতায় কালো দাগ পড়ে এবং মুকুল কালো হয়ে ঝরে পড়ার আশংকা থাকে। সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে আমের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
পেইজ সূচীপত্র:
ভালো আম উৎপাদনে সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাব:
আম গাছ ভালো রাখতে যা যা পদক্ষেপ নেয়া দরকার:
যে সময়ে আম গাছে বিভিন্ন প্রকার কীটনাশক বিষ ও পাউডার প্রয়োগ করা দরকার:
কোন সময়ে আম গাছে মুকুল আসে এবং মুকুল সতেজ থাকে?
কোন সময়ে মটরের দানার সমান ফল আসে?
কোন সময় আমের গাছে পানি দিতে হয়?
কত দিন পর পর আম বাগান স্প্রে করতে হয়?
বাংলাদেশে কত রকমের আম উৎপাদন হয় এবং কোন আম সবচেয়ে বেশি সুস্বাদু ?
কোন কোন জেলায় আম সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয়?
ভালো আম উৎপাদনে সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাব:
আমের মহা লাগা বা কুয়াশা আবহাওয়া বিরাজ করলে বা হালকা বৃষ্টি দেখা দিলে সাথে সাথে কীটনাশক ওষুধ দিয়ে স্প্রে করতে হবে। সঠিক সময়ে স্প্রে করলে আমে বা মুকুুলে যে ক্ষুদ্র আকারে পোকা থাকে সেগুলো মরে যাবে। ফলে মুকুলগুলো সতেজ এবং মুকুলের সাইজ বড় হবে। তাছাড়া সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও সঠিক সময়ে স্প্রে বা পরিচর্যার অভাবে মুকুলগুলো ঝড়ে পড়ে যায়। ফলে সামগ্রিকভাবে আমের উৎপাদন ব্যহত হয়।
আম গাছ ভালো রাখতে যা যা পদক্ষেপ নেয়া দরকার:
আম গাছ ভালো বা সতেজ রাখতে হলে আগস্ট বা সেপ্টেম্বর মাসে রোগক্রান্ত এবং অপ্রয়োজনীয় ডালপালা, শাখাপ্রশাখা, পরগাছা উদ্ভিদগুলো পরিস্কার করে দিতে হবে। কেননা এগুলো থাকলে গাছকে বাড়াতে বাধা দেয় এবং গাছের কচি পাতাগুলো পরিস্কার থাকে। ফলে গাছগুলো সঠিকভাবে আলো বাতাস পাবে। এছাড়া যদি গাছের কচি পাতায় পোকা লাগে তাহলে ঐসময় একটা স্প্রে দিয়ে দিতে হবে। আগষ্ট সেপ্টেম্বর মাসে গাছের গোড়া কোদাল দিয়ে পরিস্কার করে প্রয়োজনমত সার দিতে হবে। এসময় রাসায়নিক প্রয়োগ করতে হবে। গোবর সার দিতে পারলে আরও গাছের জন্য উপকারী হবে।
যে সময়ে আম গাছে বিভিন্ন প্রকার কীটনাশক বিষ ও পাউডার প্রয়োগ করা দরকার:
অক্টোবর বা নভেম্বর মাসের দিকে (মুকুল আসোর আগে) গাছের পাতায় হপার বা মহা লাগে এসময় হপার দমনের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের সার যেমন: ইমিটাফ, কনফিডর এছাড়া অন্য নামের অনুমোদিত কীটনাশক বিষ যেমন: ৫৫ ইসি, রিপকড, রেলেথ্রিন, ছত্রাকনাশক পাউডার যেমন:ইন্ডোফিল, ডাইথেন, কম্পানিয়ন এছড়া অন্যান্য অনুমোদিত ছত্রাকনাশক পাউডার একসাথে মিশিয়ে পানির পরিমান অনুযায়ী পরিমিত পরিমানে মিশ্রন করে গাছগুলো ভালোভাবে স্প্রে করে দিতে হবে। তাহলে গাছের আকৃতি , পাতার গঠন, নতুন পাতা গজানো ইত্যাদি ঠিকভাবে থাকবে।
কোন সময়ে আম গাছে মুকুল আসে এবং মুকুল সতেজ থাকে?
সাধারনত ডিসেম্বর -জানুয়ারি মাসে আম গাছে মুকুল আসে। তবে আমের প্রকার বা জায়গা বিশেষে আগে ও পরে মুকুল আসে। মুকুল আসার শুরুতে ছত্রাকজনীত মুকুলে রোগ দেখা দেয়। ফলে মুকুল আসার সময় বিভিন্ন ধরনের বিষ প্রয়োগ করতে হবে। মুকুলের প্রাথমিক দিকে সাদা বা কালো জাতীয় দাগ দেখা দেয় । এজন্য ফুল ফাটার আগে ছত্রাকনাশক পাউডার যেমন: কুমুলাস, থিওভিট ইত্যাদি পরিমিত পরিমানে পানিতে মিশিয়ে ভালো করে মুকুলগুলো ধুয়ে দিতে হবে এবং ফুল ফেটে গেলে অথবা কচি দানার মত ফল আসার সময় কোন বিষ দেয়া যাবেনা।
কোন সময়ে মটরের দানার সমান ফল আসে?
আম যখন মটরের দানার সমান হবে তখন আমে হপার বা মহা বা ছোট পোকামাকড়ের উপদ্রব দেখা দেয়। ঐ সময় আম যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য আমের মুকুলগুলো ভালভাবে দেখতে হবে যে আমগুলোতে কোন ধরনের মোকা বা মহার আক্রমন হচ্ছেকিনা। না হলেও আমের আকৃতি সুন্দর ও পরিস্কার রাখার জন্য ৫৫ইসি কীটনাশক ওষুধ, মহার জন্য বা হপারের জন্য ইমিটাপ ছত্রাকনাশক ওষুধ পানিতে মিশিয়ে ভালভাবে স্প্রে করে দিতে হবে। তাহলে আমের রং বা আকৃতি পরিস্কার থাকবে।
কোন সময় আমের গাছে পানি দিতে হয়?
মুকুলে গুঠি আসলে ঐ সময় বৃষ্টির পানি না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। বৃষ্টি না হলে গুঠি আমগুলো রস না পাওয়ায় শুকিয়ে যায় এবং বোটা শুকিয়ে আম ঝরে পড়ে। একজন্য আম যেন ঝরে না পড়ে সেক্ষেত্রে আমের বাগানে প্রতিটি গাছের গোড়ার চারদিকে একটু উঁচু করে পানি যেন জমা থাকে সেরকমভাবে পানি দিতে হবে। তাহলে আমগুলো রস পাবে এবং বাড়তে থাকবে। মাঝে মাঝে এমনকি ২/৪দিন অন্তর অন্তর বাগানের ঘুরে দেখতে হবে। যে আমে কোন সমস্যা আছে কিনা।
কত দিন পর পর আম বাগান স্প্রে করতে হয়?
আমরা হয়তো অনেকে জানিনা যে কত দিন পর পর আম থাকা অবস্থায় স্প্রে করতে হবে। আমাদের মনে রাখা উচিত যে আম আসা অবস্থায় অন্তত ১৫ দিন বা ২০ দিন পর পর বাগানের স্প্রে করা উচিত। তাহলে আমের উপর কোন প্রকার আক্রমন বা দাগ লাগবেনা। এইভাবে আমরা যদি আম দেখাশুনা করি তাহলে আমের চেহারায় একটা উজ্জ্বলতা ভাব আসবে এবং সাইজও সুন্দর হবে।
বাংলাদেশে কত রকমের আম উৎপাদন হয় এবং কোন আম সবচেয়ে বেশি সুস্বাদু ?
বাংলাদেশে বিভিন্ন জাতের আম উৎপাদন হয়। যেমন: আশ্বিনা, লক্ষনভোগ, গোপালভোগ, ফজলি, ল্যাংড়া,বিভিন্ন জাতের গুঠি । সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে এখন বিভিন্ন জাতের আম উৎপাদন হয়ে থাকে এবং সারা বছর আম হয় । যেমন: আম্রপালি, বারি-৪, কাটিমন, হাঁড়িভাঙ্গা ইত্যাদি। তবে স্বাদের দিক দিয়ে হিমসাগর আম সবচেয়ে বেশি । এজন্য এই আমকে জাতীয়ভাবে স্বীকৃত দেয়া হয়েছে।
কোন কোন জেলায় আম সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয়?
আমের জন্য রাজশাহীর চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলা বিখ্যাত। এখন অনেক জেলাতে আম উৎপাদন হয়ে থাকে। যেমন: নওগাঁ, সাপাহার, বরেন্দ্র এলাকা, সাতক্ষিরা, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও এসব এলাকায় যথেষ্ট পরিমানে আম উৎপাদন হয়ে থাকে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে কম বেশি আম উৎপাদন হয়ে থাকে। যা দেশের সব জায়গাতে আমের চাহিদা পুরনে সক্ষম হয়।
উপসংহার: দেশের অথনৈতিক উন্নয়নে আমের ভুমিকা থাকলেও আম উৎপাদকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রতিকুল আবহাওয়া এবং আম চাষের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরনের দাম বৃদ্ধি পাওয়া চাষীরা আম উৎপাদনে উৎসাহী হচ্ছে না। অনেক আম বাগান কেটে ফেলা হচ্ছে। ঐ জমিতে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url